অবশেষে উইকেট পেলেন সাকিব!

ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতেও প্রথম ইনিংসে ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। সেই সাকিব আল হাসান চট্টগ্রাম টেস্টে এসে যেন খানিকটা নিষ্প্রভ। তার বলগুলো বিপজ্জনকভাবে বাঁক খেয়ে অস্তস্তিতে ফেলছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের; কিন্তু দুর্ভাগ্য তার উইকেটের দেখাই মিলছিল না। অবশেষে সাকিব সাফল্যের মুখ দেখলেন। অসাধারণ এক ঘূর্ণিতে ফেরালেন ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা অ্যাস্টন অ্যাগারকে।

ইনিংসের ১১৭তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের অনেক বাইরে স্পাইক আর বুটের আঘাতে তৈরি হওয়া ক্ষতের ওপর বল ফেলে টার্ন করান। সেটিই সোজা ভেতরে ঢুকে গিয়ে ভেঙে দেয় অ্যাগারের উইকেট। ৩৭৬ রানে পড়লো নবম উইকেট। ৩৫ বল খেলে অ্যাগার করলেন ২২ রান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার রান ১১৯ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৭৭। লিড ৭২ রানের। উইকেটে রয়েছেন স্টিভেন ও’কিফ ৮ রানে এবং নতুন নামা নাথান লিওন শূন্য রানে।

এর আগে স্পিনারদের ট্র্যাকে ভালোই ঝড় তুললেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল ইনিংসের শুরুতে তিনিই প্রথম ব্রেক থ্রুটা এনে দিয়েছিলেন ম্যাট রেনশকে আউট করে। আজও সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি। তার দেখানো পথ ধরে মেহেদী হাসান মিরাজও জ্বলে উঠলেন। শেষ দিকে এসে আবারও দুই বন্ধু মোস্তাফিজ এবং মিরাজ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে আঘাত হানলেন। প্রথমে মোস্তাফিজ ফেরালেন ম্যাথ্যু ওয়েডকে। পরের ওভারেই ম্যাক্সওয়েলকে ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর খানিক পর প্যাট কামিন্সকেও এলবির ফাঁদে ফেলেন অফ স্পিনার মিরাজ।

মিরাজের বলে কার্টরাইট ফিরে যাওয়ার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে জুটি বাধেন ম্যাথ্যু ওয়েড। তবে জুটিটা বড় করতে পারলেন না। মাত্র ২১ রানের জুটিতে তিনি একা রান করেন ৮টি। অবশেষে ইনিংসের ১০৬তম ওভারে, মোস্তাফিজের সোজা লেন্থের তৃতীয় বলটি এক পা এগিয়ে এনে খেলতে যান ওয়েড। নিচু হয়ে আসা বলটিতে তিনি ব্যাটই লাগাতে পারেননি। দুই প্যাডেই আঘাত হানে বল। আম্পায়ার আউট ঘোষণা করার পরও রিভিউ নেন ওয়েড। তাতেও টিকতে পারলেন না তিনি। আউট হয়ে গেলেন।

পরের ওভারেই মিরাজের আঘাত। এবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সাজঘরে ফেরত পাঠালেন তিনি। তবে এ উইকেটরক্ষক মুশফিকের দুর্দান্ত এক ক্যাচ ছিল মূল ভুমিকায়। মিরাজের ঘূর্ণিতে বোকা বনে বল ব্যাট-প্যাড করে যখন ঠিক স্ট্যাম্পের পাশে মাটিতে পড়তে যাচ্ছিল, তখনই একেবারে মাটির ওপর ধরে ফেলেন মুশফিক। আম্পায়ার আউট দিলেও ম্যাক্সওয়েল রিভিউ নেন। তাতেও স্পষ্ট দেখা গেলো তিনি কট বিহাইন্ড। ৩৪২ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পর ৩৪৬ রানে পড়ল ৭ম উইকেট। ম্যাক্সওয়েল ফিরলেন ৯৮ বলে ৩৮ রান করে।

ম্যাক্সওয়েল আউট হওয়ার পর অ্যাস্টন অ্যাগার এবং প্যাট কামিন্স মিলে ২০ রানের জুটি গড়েন। এরপর আবারও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়েন প্যাট কামিন্স। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। মুশফিক রিভিউ নিলে টিভি আম্পায়ার আলিম দার দেখে-শুনে আউটের ঘোষণা দেন। ৪ রান করে ফিরে যান কামিন্স। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৮ উইকেটে ৩৬৪।

এর আগে বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন ভেসে গেলেও দুপুর সোয়া ১ টায় ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। দিনের শুরুটা দারুণ করে অস্ট্রেলিয়া। দূর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেন ডেভিড ওয়ার্নার। যদিও তার সেঞ্চুরির আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান দারুণ ছন্দে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্ব। সেঞ্চুরির পর ওয়ার্নারকেও ফেরান মোস্তাফিজ। আর সর্বশেষ অসি শিবিরে ভাঙ্গন ধরান মেহেদী হাসান মিরাজ। তুলে নেন কার্টরাইটকেও।

চা বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কার্টরাইটকে সাজঘরে পাঠান মিরাজ। ৯৭তম ওভারের শেষ বলে মিরাজের ঘূর্ণিতে বোকা হয়ে কার্টরাইট স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্যর হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ক্রিজে ২৫ রান নিয়ে ব্যাটি করছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

এর আগে ডেভিড ওয়ার্নার তার ক্যারিয়ারের ২০তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি তুলে নেন। তার সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই বড় সংগ্রহের দিকে এগুচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এই ওয়ার্নারকে সাজঘরের পথ দেখান কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ১২৩ রান করে আউট হন তিনি।

ইনিংসের ৮৮তম ওভারের চতুর্থ বলে কিছুটা বাউন্স দেন মোস্তাফিজ। বলটিকে লেগ গালিতে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরুলের মাথার উপর দিয়ে খেলতে গেলে কায়েসের হাতেই ধরা পড়েন তিনি। অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরেছেন ইমরুল কায়েস। বলটিকে লাফিয়ে উঠে তিনবারের চেষ্টায় তালুবন্দী করেন ইমরুল। এ ইনিংসে এটি মোস্তাফিজের দ্বিতীয় উইকেট।

এর আগে ৮২ রান করে হ্যান্ডসকম্ব ফিরে যাওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ২৫০। হ্যান্ডসকম্ব সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রানআউট হয়ে যান।

Leave a comment